প্ল্যান ছিল বাবাকে নিয়ে চমৎকার একটা গল্প লিখব।এমন একটা গল্প যেটা পড়ার পর সবার মনে হবে,বাহ!কিন্তু লিখতে গিয়ে টের পেলাম বাবাকে নিয়ে লেখা খুব একটা সহজ কাজ নয়।আর যখন শব্দেরও একটা লিমিট দেয়া আছে তখন কাজটা আরও কঠিন।বাবার সঙ্গে সম্পর্কটাই এমন যে তাকে নিয়ে লিখতে গেলে কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখব ভেবে পাইনা।আর যা লিখি তাও এলোমেলো হয়ে যায়।যাই হোক,বাবা দিবসের সংখ্যায় বাবাকে নিয়ে একটা কিছু না লিখলেই নয়।অন্তত তাকে যে কতটা ভালবাসি,সেটা প্রকাশ করার চেষ্টা তো করা উচিত আমার!
চেষ্টা শুরু করতে গিয়ে দেখি ২৫ তারিখ রাত ১১টা ৩৪ বাজে।পোস্ট করতে হবে ২৬ মিনিটের মধ্যে!এত কম সময়ে বাবাকে নিয়ে গল্প লিখব কি করে!তার চেয়ে বরং আমার বাবা আর আমার গল্পটাই লেখার চেষ্টা করা যাক।
আমার বাবাকে নিয়ে গল্প বলতে গেলে কোত্থেকে যে শুরু করব,তাই নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলি।আমার জন্মের আগ থেকেই তো আমার বাবাটা আমাকে ভালবাসে।তাই তো রোজ বাসায় ফেরার সময় আমার জন্য একটা না একটা গিফট কিনে আনতেন।দোলনা,পুতুল,ছোট্ট খাট আরও কত্ত কি!আর যখন সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে টুপ করে আমি পৃথিবীতে চলে এলাম,বাবার সে কি পাগলামি!আমাকে বাসায় এনে আমার জন্য কেনা ছোট্ট খাটে শুইয়ে দিতেই আমি নাকি বাবার দিকে তাকিয়ে এমন এক টুকরো হাসি দিয়েছিলাম যে বাবার মনে হয়েছে এর চেয়ে পবিত্র কিছু তিনি কখনও দেখেননি।তাই আমার বাংলা ব্যাকরণে ভীষণ ভাল মার্কস পাওয়া বাবা আমার নাম রেখে দিলেন “শুচিস্মিতা” যার অর্থ যে নারীর হাসি পবিত্র।আমার আম্মু বিশাল চিৎকার জুড়ে দিল,’এত বড় নাম রাখা যাবে না’।আমার বাবা তখন কি আর করেন?নামটা একটু ছোট করতে বাধ্য হলেন ঠিকই,তবে নাম থেকে হাসিটা মুছতে দিলেন না।আমার নাম হয়ে গেল সুস্মিতা।
আমি এই পৃথিবীতে এসে প্রথম যে অর্থবহ শব্দটি উচ্চারণ করি সেটা নাকি ছিল “বাবা”।যদিও আম্মুর দাবি আমি “মা” বলেছি আগে।যাই বলে শুরু করি না কেন,এরপর থেকে দিনে কতবার যে শব্দটা কারণে অকারণে উচ্চারণ করেছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।এতক্ষণ গল্পের যে অংশটায় ছিলাম,সেটুকু আমার শোনা।এবার আমার দেখা “বাবা”কে নিয়ে কিছু বলি।
ছোটবেলা থেকেই ভীষণ জেদি আর একগুঁয়ে ছিলাম আমি।ফ্যামিলির একমাত্র মেয়ে হলে যা হয়,আদর আহ্লাদে আটখানা অবস্থার কারণে প্রায়ই এমন সব কাণ্ড করেছি যার গল্প বলতে শুরু করা মানে অন্য গল্পে ঢুকে যাওয়া।কিন্তু আজকের গল্প তো শুধু বাবাকে নিয়ে।যা বলছিলাম,আমার সেই জেদ ভাঙ্গাবার সাধ্য ছিল একমাত্র বাবার।ছোটবেলার সবচেয়ে চমৎকার স্মৃতির কথা যদি কেউ জানতে চায় তাহলে আমি বলব রোজ ভোর বেলায় ঘুম ঘুম চোখে বাবার কাঁধে চড়ে স্কুলে যাওয়ার সময়টা।সেই সময়টুকুতে আমার ঘুম কাটাতে কত্ত গল্প যে বলতেন বাবা!আমি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যেতাম,একটুও বিরক্ত না হয়ে সেগুলোর জবাব দিতেন বাবা।জীবনের প্রথম পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছিলাম আমি,বলা ভাল ফার্স্ট হয়েছিলেন বাবা।আমাকে পড়ানো খুব একটা সহজ ছিল না আর সেই কঠিন কাজটা খুব চমৎকার ভাবে করেছিলেন বাবা।এরপর আমি জীবনে যতবার ফার্স্ট হয়েছি,হোক সেটা পরীক্ষায়,হোক কালচারাল প্রোগ্রামে,হোক গল্প লেখায় সবটুকু কৃতিত্বই আসলে বাবার পাওনা।ছোটবেলায় অংকে ১০০ পেলে কপালে যে চুমুটা খেতেন বাবা,সেই চুমুর লোভেই আজও কোন অংক দেখে ভয় পাই না আমি।
আমার সফলতাগুলো আমাকে ততটা হ্যাপি করেনি যতটা করেছে বাবার মুখে এটা শুনতে পাওয়া যে “আমার বুলবুলি মা আজ আমাকে যতটা খুশি করেছে,আমার আর জীবনে চাওয়ার নেই।“
আমি আজ খুব ভাল একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি কারণ বাবা অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে ঢোকার আগে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,আর কেউ পারুক না পারুক আমার মা এই একটা ঘণ্টাকে সবচেয়ে সাকসেসফুল করতে পারবে।
বাবা শব্দটা আমার কাছে কত বিশাল আমি ৫০০০ শব্দে সেটা কখনই বোঝাতে পারব না।আমার কাছে বাবা হলেন “বাবা” যে আছে জানলে পৃথিবীর কোন কিছু অসম্ভব মনে হয় না।আমার কাছে বাবা হলেন “আশ্রয়” যার বুকে থাকলে পৃথিবীর কোন গ্লানি আমাকে ছুঁতে পারেনা।আমার কাছে বাবা মানে “গাইড” যে আমাকে কখনও ভুল রাস্তায় পা বাড়াতে দেয় না।আমার কাছে বাবা হলেন “বন্ধু” যার কাছে নিজেকে খোলা বইয়ের পাতার মত করে শেয়ার করা যায়।আমার কাছে বাবাই সবচেয়ে পাওয়ারফুল সুপারহিরো।
আমার বাবা আমাকে বইয়ের দুনিয়া চিনিয়েছেন।প্রতিবছর বইমেলায় গিয়ে নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকেছি বলেই আমি জানি কত চমৎকার একটা জগত আছে আমার বইয়ের আলমারিতে।যে জগতে আমি আর বাবা ডুবে গেলে মায়ের কথা আমাদের কানে ঢোকে না।
আমার বাবা আর আমি একসাথে খেলা দেখতে বসলে বাকি সব একপাশে রেখে দিই আর আমার মনে হয় জীবনে আমাকে কখনও বন্ধু খুঁজতে “ফাইন্ড ফ্রেন্ডস” অপশনটা ব্যবহার করতে হবে না।বাবা থাকতে আর কাউকে কি লাগে! আমাকে সবাই ডাকে “পাপা’স গার্ল”।আমি আসলেই তাই।আমার বাবা আমার পৃথিবী।
লেখাটা খুব ন্যাকা আর আহ্লাদি টাইপ হয়ে গেল।কি করা যাবে?আমার আহ্লাদ আর ন্যাকামির সবচেয়ে বড় যে জায়গাটা তাকে নিয়েই তো লিখছি।
আমার অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছা হচ্ছিল।কিন্তু মনে হয়না আমি লিখে কখনও বাবার জন্য আমার পুরো ফিলিংস টা বোঝাতে পারব।বরং বাবাকে জড়িয়ে ধরে একবার চিৎকার করে আসি,”আই লাভ ইউ বাবা,এত ভাল একটা বাবা হওয়ার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।“
পৃথিবীর সমস্ত বাবাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা।যাদের বাবা মারা গেছেন, আল্লাহ তাদের জান্নাত দান করুন,ঠিক যেমন জান্নাত করে রাখতেন তারা তাদের সন্তানের পৃথিবী।
১৭ জানুয়ারী - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী